গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি? উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি? ? গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মেয়ের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় বিভিন্ন ধরনের নিয়ম কারণ মেনে চলতে হয়। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কিনা তাই আপনাদের জন্য এ সম্পর্কে আজকের এই ব্লগটি।
আজকের এই ব্লগটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ ও কিভাবে জলপাই খেতে হয়। বিভিন্ন প্রকার জলপাইয়ের প্রকারভেদ এবং গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পেজ সূচীপত্রঃ গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি? উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
- গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি তা সম্পর্কে
- জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ
- কিভাবে জলপাই খাবেন গর্ভাবস্থায়
- জলপাইয়ের তেল গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের নিয়ম
- জলপাই এর প্রকারভেদ এবং ব্যবহার
- গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন
- গর্ব অবস্থায় জলপাই খাওয়ার নিয়ম
- জলপাই সংরক্ষণ করে রাখার নিয়ম
- জলপাই খাওয়ার উপকারিতা
- জলপই খাওয়ার অপকারিতা
- লেখকের মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি? উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি তা সম্পর্কে
সাধারণত আমরা সকলেই জানি গর্ভাবস্থায় প্রায় সকল মহিলারই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে। আর জলপাইয়ের মধ্যে যে সকল উপাদান রয়েছে তা আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে বিশেষ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। জলপাইয়ের মধ্যে থাকে পলিফেনাল নামক একটি উপাদান।
যা আমাদের শরীরের কোষগুলো কে ফ্রী রেডিক্যাল নামক ক্ষতিকর উপাদানের হাত
থেকে রক্ষা করে। এর ফলে আমাদের দেহে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ থেকে
আমরা রক্ষা পায়। এছাড়াও জলপাইয়ের তেল আমাদের হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সহায়তা
করে। জল পেয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড যা আমাদের রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
জলপাইয়ের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ফাইবার। যা
আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তবে আমাদের প্রত্যেকেরই গর্ভাবস্থায়
খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী। কেননা এ সময় সামান্য
একটি ভুলের কারণে গর্ভবতী ও গর্ভে থাকা সন্তান উভয়েরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
যদিও আমরা জানি যে জলপাইয়ের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে কিন্তু উপকারিতার
পাশাপাশি সব ধরনের খাবারেরই কিছু অপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে জানতে হবে। ঠিক
তেমনি জলপাইয়েরও কিছু অপকারিতা আছে তাই জলপাই খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে
হবে।
আরও পড়ুনঃ মেটে আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
সাধারণত আপনি গর্ভাবস্থায় প্রথমদিকে লবণযুক্ত জলপাই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
জলপাইয়ের মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রা সোডিয়াম যা গর্ভবতী মেয়েদের উচ্চ রক্তচাপে
ঝুঁকি বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও জলপাইয়ে তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ফ্যাট যা আপনার ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। গর্ভ অবস্থায় জলপাই খেলে আপনার শারীরিক
অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন আপনি এলার্জি বা অন্য কোন সমস্যায় সম্মুখীন হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জলপাই খেতে হবে। জলপাইয়ে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে।
যার ফলে আপনি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত হারে জলপাই খেলে আপনার বদহজম হওয়া বা
বমি বমি ভাব হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে জলপাই আপনার জন্য একটি
পুষ্টিকর খাবার তালিকায় পড়তে পারে। কিন্তু অবশ্যই আপনাকে মাত্রা পরিমাণ জলপাই
খেতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে জলপাই খেলে আপনার শারীরিক সমস্যায় এবং নবজাতকের
সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ
গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি? সাধারণত জলপাই ফলটি একটি পুষ্টিকর
খাবার। জলপাই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ, ভিটামিন ও প্রচুর পরিমাণে
এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এছাড়াও জলপাই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ও পটাশিয়াম। আমরা
সকলেই জলপাই খেতে পছন্দ করি।
বিশেষ করে জলপাই কাচা না খেলেও আচার বা রান্না করে খেতে প্রায় সকলেই পছন্দ করেন।
সাধারণত আঁশ জাতীয় খাবার আমাদের ক্ষুদ্রান্ত ভালো রাখতে সহায়তা করে।
জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার জাতীয় উপাদান। যেহেতু
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ জাতীয় খাবার প্রয়োজন হয়। সেজন্য
ক্যান্সার প্রতিরোধে জলপাইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা জানি জলপাই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি যা আমাদের দেহের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি আমাদের ত্বক ও দাঁতকে মজবুত করতে
সহায়তা করে। আপনাদের মধ্যে যদি কারো বাতির ব্যথা নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
সে ক্ষেত্রে আপনি যদি নিয়মিত জলপাই খান তাহলে বাতের ব্যথা কিছুটা পরিমাণ হলেও
কমবে।
আরও পড়ুনঃ বিলাতি ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
এছাড়াও অনেকেই ভিটামিন এ অভাবে রাতকানা রোগে আক্রান্ত। তারা যদি নিয়মিত জলপাই
খান তাহলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে জলপাই অতুলনীয় ভাবে ভূমিকা পালন করে।
জলপাই বিভিন্নভাবে আমাদের ত্বককে সূর্যের হাত থেকে রক্ষা করে। জলপাইয়ের গুনাগুন
সম্পর্কে শেষ করা যাবে না।
কিভাবে জলপাই খাবেন গর্ভাবস্থায়
গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি? আমি বলব গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া একদম
নিরাপদ। তবে আপনাকে সতর্কভাবে পরিমাণ মতো জলপাই খেতে হবে। কারণ যে কোন খাবারের
অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার
কিছু নিয়ম নিম্নে দেওয়া হল-
-
গর্ভাবস্থায় আপনি কাঁচা জলপাই বা জলপাই তেল প্রচুর পরিমাণে খেতে পারেন ।এতে
করে সমস্যা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ এভাবে খেলে অতিরিক্ত সোডিয়াম
থাকে না।
-
আপনি ইচ্ছে করলে লবণ দিয়ে সরাসরি কাঁচা জলপাই খেতে পারেন এতে করে বেশি
পুষ্টি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
-
তবে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া
উচিত। কারণ যদি আপনার শরীরে উচ্চ রক্তচাপ থাকে সে ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে।
-
গর্ভাবস্থায় হালকা জলপাই থেথা করে লবণ ও মরিচের গুড়া দিয়ে খেতে পারেন এতে
করে মুখের রুচি বাড়ে।
-
এছাড়াও জলপাই খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি আচার তৈরি করেও খেতে পারেন।
জলপাইয়ের তেল গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের নিয়ম
জলপাই এর প্রকারভেদ এবং ব্যবহার
গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন
গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার নিয়ম
জলপাই সংরক্ষণ করে রাখার নিয়ম
জলপাই খাওয়ার উপকারিতা
- চোখের জন্য উপকারিঃ জলাপাই এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ উপাদান আছে। যা আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে।পাশাপাশি রাতকানা রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস এখন একটি কম বেশি সকলের হয়ে থাকে। জলাপাইয়ে আছে মনোস্যাকারাইড ও ফ্যাট যা আমাদের শরীরের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যা ফলে ইনসুলিন নেওয়ার তেমন একটা প্রয়োজন হয় না।
- ত্বক ও চুলের যত্নেঃ জলপইয়ের তেলে থাকে এসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। জলপাইয়ের তেল চুলের গোড়া মজবুত করে এবং পাশাপাশি ঝলমলে ও চুল পড়া কমে। পাশাপাশি সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
- লৌহের ঘাটতি পূরণঃ জলা পইয়ে রয়েছে লৌহ জাতীয় খনিজ। যা আমাদের দেহে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য প্রয়োজন হয়। লৌহের অভাবে আমাদের শরীর দূর্বল, অক্সিজেন কমে যায় ও অ্যানিমিয়া হয়ে থাকে। তাই জলপাই আমাদের শরীরে লৌহ জাতীয় খাবার তৈরি করে এবং লৌহকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে।
- পিত্তথলিতে পাথরঃ আমাদের পিত্তথলিতে পাথর হলে বমি ভাব ও পেট ব্যথা করে। এমন অবস্থায় জলপাই পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রক্রিয়া ধীর গতি করে। আপনি নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ জলপাইয়ে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হাড় ভালো রাখেঃ জলপাই আছে মনোস্যাচুরেইড। যা আমাদের শরীরের হাড়কে ক্ষয় রোধ থেকে রক্ষা করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধঃ জলাপাইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা মুক্তি কণিকা ধ্বংস করে এবং পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- হৃদরোগ প্রতিরোধঃ জলা পইয়ে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগ থেকে মুক্তি রাখতে সাহায্য করে।
জলপই খাওয়ার অপকারিতা
- পেটে গ্যাস হওয়াঃ জলপাইয়ের খোসাতে আঁশ জাতীয় উপাদান আছে। আপনাদের মধ্যে অনেকের এই আঁশ খাওয়াতে পেটে গ্যাস বা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- এলার্জিঃ অনেকের জলপাই খাওয়ার ফলে এলার্জি হতে পারে। ত্বক ফুলে ও চুলকাতে পারে।
- কিডনি সমস্যাঃ যদি আপনার কিডনি সমস্যা থাকে তাহলে পটাশিয়াম জাতীয় খাদ্য থেকে বিরত থাকতে হয়।আর জলপাইয়ের প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে।তাই কিডনি সমস্যা থাকলে জলপাই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- ওষুধের পাশাপাশিঃ এমন কিছু ওষুধ আছে যেগুলোর পাশাপাশি জলপাই খাওয়া ঠিক না।যেমন- রক্ত পাতলা হওয়া ওষুধের সাথে জলপাই খেলে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মস্তিষ্কের রোগঃ জলা পইয়ে আছে মনোস্পেস্যাচুরেইড আর অতিরিক্ত এটা খাওয়া হলে আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ওয়েম্যাক্স আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url