সজনে পাতার মজাদার ৪টি রেসিপি
আমরা সকলে সজনে পাতা খাওয়াতে অভ্যস্ত। সজনে পাতা একদিকে যেমন উপকারী অন্যদিকে তেমন খেতে খুব সুস্বাদু। সজনে পাতা দিয়ে কিভাবে চারটি রেসিপি তৈরি করা যায়। সে সম্পর্কে জানার জন্য আর্টিকেলটি মন দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
পেজ সূচীপত্রঃ সজনে পাতার মজাদার ৪টি রেসিপি
সজনে পাতার মজাদার ৪টি রেসিপি
সজনে পাতার গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে বা বলে শেষ করা সম্ভব না। সজনে পাতায় রয়েছে নানা প্রকার স্বাস্থ্যগুণ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম,জিংক থাকার কারণে দাঁতের জন্য সজনে পাতার ভূমিকা অপরিসীম। সজনে পাতা আমরা সাধারণত বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকে।
বিশেষ করে আমাদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা ওষুধের পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনে পাতা খেয়ে থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন ভাবে খাই। সজনে পাতার গুড়া করে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে ১ চা চামচ দিয়ে খেয়ে থাকেন। অনেককে আবার কাঁচা সজনে পাতার রস খেয়ে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ নখের কুনি দূর করার ঘরোয়া উপায়
ঠিক রেসিপির ক্ষেত্রেও তাই অনেকে অনেক রকম ভাবে খেয়ে থাকেন। গ্রামের মানুষ বেশি সময় শাক হিসেবে খান। হাতের কাছে থেকে নিয়ে এসে ছড়িয়ে শাক হিসেবে রান্না করে খান।আবারও অনেকে ভর্তা বানিয়ে খায়।আপনাদের জন্য নিচে সজনে পাতার মজাদার ৪ টি রেসিপির তৈরি নিয়ম ও উপকরণ ব্যখ্যা করা হলো।
সজনে পাতার প্রথম রেসিপি ভর্তা
সজনে পাতা চারটি রেসিপির মধ্যে প্রথম রেসিপি সজনে পাতার ভর্তা। সজনে পাতার ভর্তা
খেতে খুব সুস্বাদু। আমাদের মধ্যে অনেকেই সজনে পাতার ভর্তা কিভাবে করে তা জানেনা।
আবার অনেকে খেতেও পছন্দ করেন না। সজনে পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি
উপাদান।
সাধারণত জল সর্দি কাশিতে সজনে পাতার ভর্তা খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আয়রন থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও সজনে পাতা সহজে হাতে নাগালে পাওয়া যায়। আপনাদের জেনে থাকা উচিত যে সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা বলা হয়। সজনে পাতা ভর্তা খুব সুস্বাদু খাবার।
সজনে পাতার মজাদার ৪টি রেসিপি এর মধ্যে একটি সজনে পাতা ভর্তা। সজনে পাতা পরিমাণ মত,রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ,শুকনা মরিচ ৪-৫টি,পেঁয়াজ কুচি ১টেবিল চামচ,লবণ স্বাদ মতো দিবেন এবং সরিষার তেল পরিমাণ মত দিবেন।সবকিছু দিয়ে একসাথে ভাপ দিয়ে নরম হয়ে আসলে ভর্তা বানিয়ে নিন।
চিংড়ি মাছ দিয়ে সজনে পাতা ভাজি
সজনে পাতার ৪ টি রেসিপি এর মধ্যে সজনে পাতা দিয়ে চিংড়ি মাছ ভাজি দ্বিতীয় রেসিপি। সজনে পাতার স্বাস্থ্যগুন বলে বা লিখে শেষ করা সম্ভব না। সজনে পাতা চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাজি করার জন্যে প্রথমে পরিমাণ মত সজনে পাতা,১টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুচি,১টেবিল রসুন কুচি,শুকনা মরিচ৫-৬টা,কাঁচা মরিচ ৬টি,লবণ স্বাদ মতো,সাদা জিরা ১ চা চামচ,হলুদ গুড়া পরিমাণ মত, সরিষার তেল পরিমাণ মত।
এরপর কড়াইয়ে প্রথমে তেল গরম করে আগে চিংড়ি গুলোকে হালকা লাল করে ভেজে নিতে হবে। তারপর আরেকটু তেল দিয়ে জিরা ও শুকনা মরচি কড়াইয়ে দিয়ে দেন।শুকনা মরিচ ও জিরার ঘ্রাণ আসলে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে নাড়তে থাকুন।
আরও পড়ুনঃ ১৪৩২ সালের বাংলা ক্যালেন্ডার ২০২৫
এগুলো লাল হয়ে আসলে কাঁচা মরিচ,হলুদ দিয়ে দিন,তার সাথে পরিমাণ মত লবণ দিয়ে সজনে পাতা দেন।এবার ভালোভাবে নাড়তে থাকুন সজনে পাতা গুলো চিংড়ি মাছের সাথে লেগে গেলে নামিয়ে রাখনুন।ঠান্ডা হলে বাটিতে তুলে সলফ করুন। খুব সহজে তৈরি হয়ে যাবে সজনে পাতার মজাদার রেসিপি চিংড়ি সজনেপাতা।
সজনে পাতার পেঁয়াজু
সজনে পাতার ৪ টি রেসিপির মধ্যে তৃতীয় রেসিপি সজনে পাতার পেঁয়াজু।আপনারা ভাবছেন সজনে পাতার আবার পেঁয়াজু কিভাবে হবে। চিন্তা করার কিছু নেই, খুব সহজে স্বল্প সময়ে ঝামেলা ছাড়াই তৈরি করে ফেলুন সজনে পাতার পেঁয়াজু। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে পেঁয়াজু তৈরি করবেন।
প্রথমে ডাল ভিজিয়ে নিতে হবে,, ওহ সরি, বলা হয়নি কি ডাল নিবেন। আপনারা আপনাদের ইচ্ছে মত,মটরডাল,মসুর ডাল,খেসারি ডাল নিতে পারেন। ডাল ভিজে গেলে পাটায় বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। এরপর ৬ টা কাঁচা মরিচ,৪-৫ শুকনা মরিচ,জিরা গুঁড়া,রসুন কুচি,২চা চামচ পেঁয়াজ কুচি,স্বাদমতো লবণ,তার সাথে পরিমাণ মত চালের আটা মিশিয়ে নিন তাহলে পেঁয়াজু খেতে মচমচে হবে।
যদি আপনার সর্দি জ্বর থাকে তাহলে কিছু আদা কুচি করে দিতে পারন। এরপর সব গুলো একসঙ্গে মেখে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার হবে আসল কাজ। একটি কড়াই চুলায় দিয়ে গরম হলে তেল ঢেলে তেল গরম করে নিন। তেল গরম হলে হাতের সাহায্য মিশিয়ে রাখা পেঁয়াজুর ওগুলো গোল করে হাতের সাহায্য একটু চ্যাপ্টা করে তেলে ছেড়ে দেন।
লাল হয়ে গেলে তেল থেকে তুলে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর প্লেটে নিয়ে সলফ করুন সজনে পাতার পেঁয়াজু।সজনে পাতার পেঁয়াজু খেতে আমার খুব মজা লাগে।আপনাদের সাথে পেঁয়াজুর রেসিপি বলতে বলতে মন চাইছে এখনই আমি তৈরি করে নিই। আপনারা খুব সহজে এভাবে সজনে পাতার রেসিপি করে খেতে পারেন। খুব মজাদার হবে।
আরও পড়ুনঃ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সজনে পাতা দিয়ে ছোলার ডাল
সজনে পাতার ৪ টি রেসিপি এর মধ্যে সজনে পাতা দিয়ে ছোলার ডাল চতুর্থ রেসিপি। আসলে সজনে পাতার রেসিপি আপনি যে কোন ডাল বা সবজি দিয়ে তৈরি করতে পারেন।চলুন তাহলে জেনে নিই কিভাবে ছোলার ডাল দিয়ে সজনে পাতার রেসিপি তৈরি করবেন। প্রথমে সজনে পাতা পরিমাণ মত নিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর সজনে পাতাগুলো কে কুচি কুচি করে কেটে নিন।
আর হ্যাঁ, অবশ্যই আপনারা আগে ছোলার ডাল ভিজিয়ে রেখে প্রেসারকুকারে সিদ্ধ করে নিবেন। তাহলে সুবিধা হবে।তারপর চুলায় কড়াই দিয়ে তেল গরম করে নিন। এরপর পেঁয়াজ কুচি,রসুন কুচি,কাঁচা মরিচ, আাদা-রসুন বাটা ২ চা চামচ, জিরা বাটা ১ চা চামচ,আপনি ঝালের পরিমাণ বেশি খেলে শুকনা মরিচ ব্যবহার করতে পারেন। সব কিছু দিয়ে নাড়তে থাকুন হালকা পানি দিয়ে নাড়ুন।
কিছুক্ষণ পর সজনে পাতা কড়াইয়ের ভিতর দিয়ে দেন।আবারও নাড়তে থাকুন যত নাড়বেন স্বাদ তত বেশি হবে।সজনে পাতা আর ছোলার ডাল একসাথে মিশিয়ে গেলে নেমে বাটিতে করে সলফ করুন। আহ গরম ভাতের সঙ্গে সজনে পাতা আর ছোলার ডাল একসাথে খেতে মজাই আলাদা।প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা ও খুব মজা করে তৈরি করতে শিখে গেলেন।
সজনে পাতার রেসিপির উপকারিতা
সজনে পাতা দিয়ে নানাভাবে খাবারের তৈরি করা যায়। সজনে পাতার গুনাগুন অনেক যা বলে বা লিখে শেষ করা সম্ভব না। সজনে পাতার খাদ্য তালিকার মধ্যে সজনে পাতার মজাদার ৪ রেসিপি তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানতে পারলেন। রেসিপি তৈরি করার উপকারিতা আছে।যেমন হঠাৎ করে আপনার বাসায় কেউ এলো মাছ বা গোশত রান্না করছেন।
কিন্তু একটি সবজি রান্না করা প্রয়োজন। বাসায় কোন সবজি নেই সে ক্ষেত্রে খুব সহজে সজন পাতা দিয়ে সবজি বানিয়ে নিতে পারেন। তাতে কোন ঝামেলা হবে না কারণ সজনে পাতা কেনা লাগে না গ্রামের মানুষদের। শহরে যদিও বাজারে বিক্রি করতে দেখা যায়।শহরের মানুষ ও এখন বাসার আশেপাশে সজনে গাছ লাগাতে শিখে গেছে।
আবার আপনার বাসার কারো সর্দি জ্বর হলো কিন্তু বাসায় কোন ওষুধ নেই। আবার সর্দি জ্বর হলে সাধারণত ওষুধ না খেলেও হয়। সজনে পাতায় ভিটামিন, আয়রন,জিংক, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম থাকে। তাই আপনি সর্দি জ্বর এর প্রাথমিক ওষুধ হিসেবে সজনে পাতার ভর্তা, শাক বা বড়া করে খেতে দিতে পারেন। এর ফলে গায়ের ব্যাথা দূর হবে।
সজনে পাতার রেসিপি অপকারিতা
সজনে পাতার মজাদার ৪টি রেসিপি এর মধ্যে শুধু উপকারিতা আছে, না পাঠকগণ। সকল খাবারই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে আপনার শরীরে সমস্যার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ঠিক তেমনি সজনে পাতার বড়া বা ভর্তা বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। পেট ব্যথা বমি বমি ভাব হতে পারে।
ঝালের পরিমাণ আপনি বেশি দিলে হয়তো আপনার কাছে ঠিক আছে কিন্তু অন্যরা ঝালে খেতে পারছে না।সেক্ষেত্রে পেটের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পেঁয়াজু যেহেতু তেল দিয়ে তৈরি করা হয় তাই তেল জাতীয় খাবার কেলেও পাতলা পায়খানা হতে পারে। এমন অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ঘানিভাঙ্গা সরিষার তেলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
অনেকের গ্যাস হওয়ার সমস্যা থাকে। তাদের আমি বলবো আপনারা পেঁয়াজু, ভর্তা ও ছোলার ডাল দিয়ে রেসিপি না খাওয়ায় ভালো হবে। আপনাদের মধ্যে যাদের এলার্জি সমস্যা আছে। তারা সজনে চিংড়ি খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।যদিও এ সব খাবার লোভনীয়। চিংড়ি সাধারণত এলার্জি খাবারের তালিকায় ফেলা হয়। তাই লোভ না করে এসব খাবার থেকে বিরত থাকুন।
সজনে পাতা খাওয়া থেকে কারা বিরত থাকবেন
সজনে পাতার গুনাগুন সম্পর্কে বলে বা লিখে শেষ করা সম্ভব না। ঠিক তেমনি সজনে পাতার গুনাগুন এর পাশাপাশি অপকারিতা ও রয়েছে। যারা সজনে পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আপনাদের জেনে রাখা ভালো। সাধারণত গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এ সময় এমনিতেই সর্ত থাকা উচিত।
এমন অবস্থায় সজনে পাতা খাবেন না তার কারণ, সজনে ডালের সংলগ্ন বিষাক্ত উপাদান রয়েছে তা শরীরে প্রবেশ হয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।আবার ডায়াবেটিস রোগীরা অনেকে মনে করেন শুধু সজনে পাতা খেলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিষয়টা আসলে এমন না আপনাকে ওষুধের পাশাপাশি সজনে পাতা খেতে হবে।
আপনাদের মধ্যে যাদের কিডনিজনিত রোগ আছে। তাঁরা অবশ্যই সজনে পাতাকে একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করবেন না। আপনারা যথাযথ ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাবেন এবং পাশাপাশি সজনে পাতা খেতে পারেন। আর যদি শুধু সজনে পাতা খান তাহলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শেষকথাঃ সজনে পাতার মজাদার ৪টি রেসিপি
সজনে পাতার মজাদার ৪টি রেসিপি সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমি পুরো আর্টিকেলটিতে নিজের মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করে সজনে পাতার মজাদার ৪ রেসিপি তৈরি বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি। আশা করি আপনারা আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে বন্ধুর সাথে শেয়ার করুন।
আমি নিজে এই ৪ টি রেসিপি তৈরি করে খাই। আমার বাসায় একবার বরিশাল থেকে মেহমান আসছিল। আপনারা অবাক হবেন যে তারা সজনে পাতাই চিনে না। এক কথায় সজনে কি জানে না। তারা আমার এই তৈরি সজনে পাতার ভর্তা ও বড়া খেয়ে খুব প্রশংসা করেছিল এবং যাবার সময় কয়েকটা সজনে ডাল সাথে করে নিয়ে গেছে।
তাদের এলাকায় লাগানোর জন্য।প্রিয় পাটক হয়তো আপনারা শুনে ভাবছেন এটা কিভাবে সম্ভব, সজনে চিনে না।হ্যাঁ এটাই সত্যি তাদের এলাকায় সজনে গাছ নেই।এ ধরনের পোস্ট পেতে নিয়মিত ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আজ এ পর্যন্ত আবারও নতুন পোস্ট পেতে সাথে থাকুন।
ওয়েম্যাক্স আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url