মিষ্টিকুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

 

প্রিয় পাঠক ,আমরা সবাই কমবেশি মিষ্টিকুমড়া  দেখেছি কিন্তু মিষ্টিকুমড়ার  বীজ খাওয়া সম্পর্কে জানি না। তাই মিষ্টিকুমড়ার বীজ খাওয়া ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন। 


আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে  মিষ্টিকুমড়া চাষ ,মিষ্টিকুমড়ার ব্যবহৃত অংশ ,বীজ খাওয়ার নিয়ম ও উপকার সম্পর্কে জানতে পারবেন । মিষ্টিকুমড়া প্রায় সারা বছর কম বেশি পাওয়া যায় ।তবে মূলত মিষ্টিকুমড়া শীতকালীন সবজি।

পোস্ট সূচীপত্রঃ

মিষ্টিকুমড়া  চাষ করার নিয়ম

সাধারণত  সব ধরনের সবজি একই ভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। প্রথমে মিষ্টিকুমড়ার বীজ গুলো আলাদা ভাবে গজিয়ে নিতে হয় । বীজ থেকে গাছ গজাবারজন্য আপনারা  বীজগুলো পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে ভেজা বালুতে কয়েকদিন  রাখুন । ৪ থেকে ৫ দিন পর দেখবেন  বীজগুলো গজিয়ে গেছে ।

বীজগুলো গজিয়ে গেলে রোপন করতে হবে । বীজ  রোপণ  করার আগে আপনাকে জায়গা তৈরি  করে নিতে হবে। মাটিতে  গোবর  স্যার মিশিয়ে নিন । তারপর ৫ থেকে ৭ ফিট দূরুত্ব  রেখে ৩ফিট মাটি উচু করে নিন যাতে করে গোড়াতে পানি না জমে। পানি জমলে মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।                       

মিষ্টিকুমড়ার  বীজ লাগানোর  জন্য  সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে  রোপন করে নিতে হয়।ফলে শীতের আগমনের আগে গাছ বড় হয়ে যায়। মিষ্টিুমড়ার গাছ ৩ থেকে ৪ ফিট হলে মাচা তৈরি করে দিতে হয়। মাচা তৈরি করতে তার ,,লাইলন সূতা,বা বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করা হয়। 

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিসে সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম

মিষ্টিকুমড়া গাছের পরিচর্যা প্রক্রিয়া

শীতের আবির্ভাব হওয়ার সাথে গাছে ফুল আসা শুরু করে। ফুল আসার সাথে গাছে স্প্রে করতে হয়। পোকামাকড় যাতে করে নষ্ট না করতে পারে সেজন্য এক সপ্তাহ বা ১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হয় প্রথম দিকে ফলে  কুমড়া নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম থাকে।ফুল ফোটার সময় পোকামাকড় বেশি আক্রমণ করে মধু সংগ্রহ করার জন্য।

মাচাতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। ঝুলন্ত অবস্থায় মিষ্টিকুমড়া ভালো ধরে পচে যাওয়ার ঝুকি কম থাকে।মাটিতে কুমড়া চাষ করলে নজর রাখতে হয় । ভেজা মাটিতে কুমড়া ধরলে মাটির রসের কারণে পচে যেতে পারে । মাটির রস থেকে কুমড়া সুরক্ষা করার জন্য মিষ্টিকুমড়র নিচে খড় দিয়ে দিতে হবে।

গ্রাম অঞ্চলে দেখা যায় মিষ্টিকুমড়া গাছে পোকা লাগলে সকাল বেলায় চুলার ছাই ছিটিয়ে দেয় এতে করে পোকামাড়র কমে। এছাড়াও মিষ্টিকুমড়া ঘরে আনা পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বার পানি সেচ দিতে হয়। মিষ্টিকুমড়া হালকা রঙ এলেই তুলে নিয়ে এসে সংরক্ষণ করতে হয়। মিষ্টিকুমড়া কাঁচাও খাওয়া যায় । মিষ্টিকুমড়ার ডগও খেতে খুব সুস্বাদু।

মিষ্টিকুমড়া বীজ খাওয়ার নিয়ম 

আপনারা কম বেশি সবাই মিষ্টিকুমড়া খান কিন্তু মিষ্টিকুমড়ার বীজ সম্পর্কে অনেকের অজানা আছে। মিষ্টিকুমড়ার বীজ রোদ্রে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। শুকনো বীজগুলো ভেজে বাদামের মত খেতে খ ুব মজা লাগে। এছাড়াও সালাতের সাথেও রাখা যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে  পুষ্টি  রয়েছে। মিষ্টিকুমড়া রান্না করার সময় একসাথে দিয়েও খাওয়া যায়।

কুমড়ার বীজে অনেক পুষ্টি থাকার কারণে একজন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন ১৫-২০ টি করে কুমড়ার বীজ খেতে পারেন। সকালের নাস্তা হিসেবে কুমড়ার বীজ হালকা তেলে ভেজে খেতে পারেন।  কুমড়ার বীজ পাউটার করে আটার সাথে মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খেতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

মিষ্টিকুমড়ার বীজ খাওয়ার উপকারিতা

কুমড়ার বীজ একটি পুষ্টি সম্পূর্ণ খাবার। যা আমাদের অনেকের অজানা রয়েছে।সেগুলো আমাদের দেহে নানা ভাবে ভূমিকা রাখে। কুমড়ার বীজে রয়েছে - জিংক ,সালফার ,পটপসিয়াম , ফসফোরাস,ম্যাগনেসিয়াম ,আয়রন ,প্রোটিন ও কপার। এ উপাদানগুলো আমাদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।তাই  কুমড়ার বীজে যে সকল উপকার আছে নিম্নে ব্যাখা করা হলো --

ডায়াবেটিকসের জন্য কুমড়ার বীজঃ  কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম আছে। সুগার নিয়ন্ত্রণে ম্যাগনেসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেক ডায়াবেটিকস রোগি আছে তারা শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। তাই ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে কুমড়ার বীজ ভূমিকা রাখে।মূলত টাইপ-২ ডায়াবেটিকস রোগির জন্য কার্যকর । তাই নিয়মিত কুমড়ার বীজ খান।

হাড়ের গঠন সুরক্ষায় কুমড়ার বীজঃ কুমড়ার বীজে ক্যালসিয়াম রয়েছে। হাড়ের সুরক্ষার জন্য ক্যালসিয়াম অতি জরুরি আর ক্যালসিয়াম খাবার খেয়েই তৈরি করতে হয়। শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় না । কুমড়ার বীজে ক্যালসিয়াম থাকার কারনে হাড়ের গঠনে র জন্য খুব উপযোগি ।

সুন্দর ঘুমের জন্য কুমড়ার বীজঃ আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের অনিয়মিত ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে। ঘুমের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে প্রকৃতিক ওষুধ হিসেবে কুমড়ার বীজ খেতে পারেন। কুমড়ার বীজে আছে ট্রিপটোফ্যান যা সেরোটোনিন নামক  নিউরোক্যামিকেে রূপান্তিত করে আপনার অনিয়মিত ঘুম দূর করতে সহায়তা করবে।

ওজন কমাতে সহায়তাঃকুমড়ার বীজ আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কুমড়ার বীজ খেলে অনেকক্ষণ পেটে থাকে ফলে আপনাকে ক্ষুধার প্রবণতা থেকে দূরে রাখে । এতে করে আপনার ওজন কমাতে কুমড়ার বীজ সহায়তা করবেন।

গর্ভাবস্থায় কুমড়ার বীজের ভূমিকাঃ এই ক্ষুদ্র বীজটি অনেক সম্পূর্ণ। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম , আয়রন জিংক যা গর্ভবতী মায়ের শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। পাশাপাশি বাচ্চার হাড়ের গঠনকে মজবুত করে থাকে। একজন মায়ের গর্ভবতী থাকা অবস্থায় যে পরিমাণ আয়রন প্রয়োজন হয়ে থাকে তা পূরণ করতে পারে এই ছোট বীজটি।

চুলের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে ঃ চুলের রুক্ষতা দূরকরণে কুমড়ার বীজ সহায়তা করে। এজন্য প্রতিদিন নিয়ম করে ১৫-২০ টি কুমড়ার বীজ খেতে পারেন। তবে আপনাদের মধ্যে যাদের এলার্জি আছে তারা অতিরিক্ত কুমড়ার বীজ খেলে সমস্যা হতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে কুমড়ার বীজের ভূমিকা ঃ আপনারা সবাই জানেন দেশে মরণ্যধি ক্যান্সার রোগের এখন ও যথাযথ চিকিৎসা নেই। লিগান্যান স্তনের ক্যান্সার রোগের জন্য কুমড়ার বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।এছাড়াও এটি মূত্রথলির জ্বালাপোড়ায় ভূমকা রাখে।

আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের সময় প্যাড ব্যবহারের নিয়ম

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনায় আপনারা জানতে পারলেন মিষ্টিকুমড়ার বীজ কিভাবে খাবেন । কুমড়ার বীজ এর পুষ্টিগুন সম্পর্কে , কুমড়ার বীজে কি কি পুষ্টি আছে এবং সেসকল পুষ্টি আপনাদের শরীরে কিভাবে সহায়তা করবে । আশা রাখছি এই পোষ্টটি আপনারা বুঝতে পারছেন কুমড়ার বীজ খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু।

শেষকথাঃ কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আমরা সকলে খুব সহজে কুমড়ার বীজ হাতের নাগালে  পেয়ে থাকি। আমাদের শরীরে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের উপাদান প্রয়োজন হয়ে থাকে। কুমড়ার বীজ খাওয়ার অভ্যাস করলে সেসকল উপাদানের ঘাটতি কিছুটা হলেও কুমড়ার বীজ থেকে পাবো ।তাই প্রতিদিন আমরা নিয়ম করে খাদ্যের তালিকায় কুমড়া বীজ রাখতে পারি।

প্রিয় পাঠক আপনার যদি এই পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এমন সব পোস্ট নিয়মিত পেতে চাইলে প্রতিদিন ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আজ এই পর্যন্ত আবারো দেখা হবে ভিন্ন কোন পোস্টে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়েম্যাক্স আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url