কাঁকরোল খাওয়ার নিয়ম-উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁকরোল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চান। তাহলে আজকে আর্টিকেলটি শুধু আপনাদের জন্য। আর্টিকেলটির মাধ্যমে কাঁকরোল খাওয়ার নিয়ম ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন।
সেই সাথে কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ এবং কাঁকরোল ভর্তা করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আরো জানতে পারবেন কাঁকরোল কিভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং আমাদের দেহের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পেজ সূচীপত্রঃ কাঁকরোল খাওয়ার নিয়ম-উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাকরোল খাওয়ার নিয়ম
- কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন
- কাকরোলের আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে
- কাঁকরোল গাছে সার দেওয়ার নিয়ম
- কাঁকরোল খাওয়ার উপকারিতা
- কাঁকরোল ভর্তা করার সম্পর্কে জানুন
- কাঁকরোল এর ভেষজ গুণগুন
- কাঁকরোল এর অপকারিতা
- হজমের সমস্যা দূর করতে কাঁকরোল এর ভূমিকা
- শেষকথাঃ কাঁকরোল খাওয়ার নিয়ম-উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁকরোল খাওয়ার নিয়ম
কাকরোল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন না। সবকিছুরই খাওয়ার একটি
নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যদি আমরা সব কিছু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে খায়
তবে অনেক ভাবে পুষ্টি উপাদান পাব। কাকরোল হলো একটি মৌসুমী সবজি যাতে অনেক
পুষ্টিগুণ রয়েছে। কাকরোল সাধারণত গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যায়।
অনেকে অনেক ভাবে কাকরোল খেয়ে থাকেন। আবার অনেকের কাছে কাকরোল সবজিটি অপ্রিয়
হয়ে থাকে। তবে যারা সাধারণত কাঁকরোল খেতে পছন্দ করেন না তারা আজকে আমার এই
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে কাঁকরোলের সম্পর্কে আপনি ধারণা পেতে
পারেন।
কাঁকরোল সাধারণত সবুজ রঙের একটি এর পুরো শরীরে কাটা কাটা দাগ থাকে প্রায়
কাঁঠালের মতো দেখতে লাগে। কাঁকরোল আপনি ইচ্ছে করলে ভাজি, ভর্তা, চুচ্চুরি এবং
তরকারি হিসাবেও খেতে পারেন। তবে বাইরের দেশে কাফরুলের জুস করেও অনেকে খেয়ে
থাকেন।
কাঁকরোল আনার পরে আপনি কাকলির গায়ে কাটা কাটা দাগ গুলো একটু চেচে ফেলে মোটা
আকৃতির করে কেটে তরকারি হিসেবে রান্না করেও খেতে পারেন। তবে আপনি যদি মনে করেন
আপনি ভর্তা অথবা ভাজি খাবেন তাও খেতে পারেন। এমনকি আপনি সিদ্ধ করে কাঁকরোল জুসও
খেতে পারেন।
কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন
খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার পাশাপাশি অবশ্যই আপনাকে কাফরুলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে। আমরা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর সবজি খেয়ে থাকে তার মধ্যে কাঁকরোল একটি পুষ্টিকর সবজির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। কাকরলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও ফাইবার রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম ও উপকারিতা
এছাড়াও রয়েছে মিনারেল, কার্বোহাইডেট, অ্যান্টিঅক্সাইড, লুটেইন যা আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে কাকরলে টমেটোলের
চেয়েতো ৭০ গুণ লাইকোপেন রয়েছে। অন্যান্য দিক থেকে গাজরের চাইতে বীজগণ বেটা কে
রুটিন এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ রয়েছে।
কাকরলে যে সকল পুষ্টিগুন রয়েছে নিম্নে ছকের আকারে তুলে ধরা হলোঃ
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালসিয়াম | ৩৪ মিলিগ্রাম |
প্রোটিন | ৩.২ গ্রাম |
খনিজ পদার্থ | ১.১ গ্রাম |
শক্তি | ৫৩ কিলো ক্যালরি |
ভিটামিন সি | ১৪ মিলিগ্রাম |
চর্বি | ১ গ্রাম |
ভিটামিন বি | ০.৮০ মিলিগ্রাম |
শর্করা | ৭.৮ গ্রাম |
ক্যারোটিন | ১৬২২ মাইক্রগ্রাম |
আয়রন | ৪.৭ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৪৩ মিলিগ্রাম |
কাকরোলের আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে
কামরুলের আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে দিন দিন আরো উন্নত হচ্ছে। কাকরোল সাধারণত
ছোট কুমড়া সবজির মত আকৃতি হয়ে থাকে। এটি সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে প্রায়
পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশে কাকরোল চাষ করা হয়ে
থাকে।
সাধারণত কাঁকরোলের ক্ষেত্রে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল র আলাদা আলাদা গাছে হয়ে
থাকে। তবে আপনি গাছ দেখে চিনতে পারবেন না কোনটা স্ত্রী কাজ কোনটা পুরস্কার খুলনা
ফোটা পর্যন্ত। চলুন জেনে কাকরোল চাষের জন্য কি ধরনের মাটির প্রয়োজন হয়। সাধারণত
দো আঁশ ও এটেল মাটিতে কাকরোল চাষ ভালো হয়।
প্রথমে আপনাকে জমিটি ভালোভাবে ৪-৫ চাষ করে নিতে হবে তারপরে মই দিয়ে মই দিয়ে
মাটিটি সমান করে নিতে হবে। তবে আপনি যখন জমিতে শেষবার চাষ প্রয়োগ করবেন সে সাথে
সামান্য পরিমাণ সার দিয়ে দিবেন। পর আপনাকে গাছ লাগানোর জন্য বেড তৈরি করে নিতে
হবে।
সাধারণত কাকরোল গাছের মোথা মাধ্যমে গাছ তৈরি করা হয়ে থাকে। এটি আপনাকে
ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে জমিতে রোপন করতে হবে। তবে আপনি ইচ্ছে করলে বীজ
থেকেও কাঁকরোল গাছের চারা তৈরি করতে পারবেন কিন্তু সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য কষ্টকর
ও ব্যয়বহুল হবে।
তাছাড়া বীজ থেকে চারা তৈরি করে লাগালে ফলন কম পাওয়া সম্ভাবনা থাকে। তার চেয়ে আপনি যদি কাঁকরোল গাছে লতা কেটে বালু বা ছায়াযুক্ত জায়গায় মাটি চাপা দিয়ে রাখেন তাহলে ১ সপ্তাহের মধ্যে চারা তৈরি হয়ে যাবে। কাকরোল গাছ লাগানোর সময় অবশ্যই আপনাকে পুরুষ ও স্ত্রী গাছের মাথার অনুপাত ঠিক রেখে লাগাতে হবে। নয়টি এই স্ত্রী মোথা লাগানোর পর আপনাকে একটি পুরুষ মোথা লাগাতে হবে।
সাধারণত পুরুষ গাছে স্ত্রী গাছের তুলনায় খুব দেরিতে ফুল আসে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে
স্ত্রী গাছ লাগানোর 15 থেকে 20 দিন আগে লাগাতে হবে। বেড তৈরির ক্ষেত্রে ২ মিটার
দূরত্ব করবেন এবং লাগানোর ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অবলম্বন করুন। আবার যখন মাচা তৈরি
করবেন সে ক্ষেত্রেও দুই থেকে তিন মিটার দূরত্ব পড়ে রাখুন।
কাঁকরোল গাছে সার দেওয়ার নিয়ম
কাঁকরোল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার পাশাপাশি অবশ্যই আপনাকে এর চাষ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। গাছে ভালো ফলন ও বৃদ্ধি করার জন্য আপনাকে নিয়মিত সার দিতে হবে।প্রথমে আপনাকে গোবর সার পরিমাণ মত দিতে হবে। এরপর জিপসাম ৭০-৯০,ইউরিয়া ১২০-১৪৫, টিএসপি ৯৫-১২০ কেজি ও এসওপি ১০০-১২০ কেজি দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি যখন মাটি তৈরি করবেন তখনই জমিতে গোবর ছিটিয়ে নিবেন যাতে করে পানির সাথে মিশিয়ে যায়। আর চারা লাগানোর প্রায় ২ সপ্তাহ আগে টিএসপি, এসওপি, জিপসাম সার মাটির সাথে মিশিয়ে নিবেন। আপনি মোৎা লাগানোর ঠিক ১৫-৩০ দিন পর ইউরিয়া সার জমির উপরিভাগে ছিটিয়ে দিবেন। এতে করে চারা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
আর আপনি যদি এসপিও সার প্রয়োগ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে এমপি সার না দিলেও হবে।আর আপনি যেখানে কাঁকরোল চাষ করবেন সেখানকার মাটি অম্লীয় হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ডলোচুন জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। আর সেটা প্রয়োগ করতে হবে আপনি যখন জমিতে শেষ চাষ দিবেন সেই সময়।
কাঁকরোল খাওয়ার উপকারিতা
আপনারা হয়তো জানেন না কাঁকরোলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারি। এছাড়াও কাঁকরোলে অনেক ভেষজগুন রয়েছে।কিন্তু সঠিক ভাবে এর উপকারিতা সম্পর্কে না জানার জন্য আমরা অনেকেই কাঁকরোল খেতে পছন্দ করি না।তাই আজ আমি আপনাদেরকে কাঁকরোল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো।
- ডায়াবেটিস বর্তমানে একটি খুব সাধারণ রোগ হয়ে গেছে। প্রায় সচরাচর কম বেশি সকলের ডায়াবেটিস হয়ে গেছে। কাঁকরোল একটা ফাইবার ও খুব কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার। যা রক্তের গ্লুকোজ এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার কারণে আমরা কাঁকরোল খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে পারি।
- কাঁকরোলে ফাইবার থাকার কারণে আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই আপনি কাঁকরোল খেতে পারেন।
- কাঁকরোল এর মধ্যে এক ধরনের প্রোটিন থাকে যা আপনার শরীরে ক্যান্সারের কোষগুলো বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।তাই আপনি নিয়মিত কাঁকরোল খেতে পারেন। অনেকে আবার কাঁকরোলকে স্বর্গীয় ফল হিসেবে চিহ্নিত করেন।
- আমাদের চোখের জন্য কাঁকরোল একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। আপনি নিয়মিত কাঁকরোল খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আপনার চোখের ছানি পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে।
- কাঁকরোল প্রোটিনের প্রধান উৎস। আমাদের শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে কাঁকরোল খাওয়া প্রয়োজনীয়।
- ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শরীরকে সুস্থ রাখতে সব সময় ফাইবার প্রয়োজন হয়। আর আমরা এই উপাদান সহজে কাঁকরোল খাওয়ার মাধ্যমে পেয়ে থাকি।
- তারুণ্য ধরে রাখার জন্য আমরা অনেক ধরনের চেষ্টা করি। কাঁকরোলে রয়েছে বিটা কেরোটিন, ফ্লাভোনয়েড ও জিয়াজেন্থিন নামক উপাদান। যা আমাদের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে খুসখুসি কাশি যা খুব বিরক্তিকর। এগুলো সাধারণত এলার্জি, স্প্রে ব্যবহার, যক্ষ্মা, ধূমপান, মানষিক চাপ ও ওষুধের পার্শ্বক্রিয়ার কারণে। আর আপনি এগুলো থেকে সহজে মুক্তি পাবেন কাঁকরোল খাওয়ার জন্য।
- আপনার লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে আপনি অসুস্থ হয়ে বা মারা যেতে পারেন। কাঁকরোল কম ক্যালারি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যা আপনার ওজন ও লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- আপনার হার্টের সমস্যা থাকলে হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত কাঁকরোল খেতে পারেন। কারণ গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে কাঁকরোলে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন আছে। যা আমাদের হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ওয়েম্যাক্স আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url